বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

বাংলা বানান জটিল কি?



মনোজকুমার দ. গিরিশ৤
মণীশ পার্ক, কোলকাতা, ভারত


আরও দেখুন--বাংলা লেখা ছাপিয়ে গেল ইংরেজিকে অক্টোবর, ২০১৪-তে প্রকাশিত





লেখাটি অহনলিপি-বাংলা১৪(AhanLipi-Bangla14) ফন্টে পড়তে হবে, নচেৎ লেখাটির উদ্দেশ্য স্পষ্ট হবে না৤
ফন্ট ডাউনলোড লিংক:





সঙ্গে দেওয়া ফাইল দেখে নিতে হবে৤

অহনলিপি-বাংলা১৪ ডিফল্ট টেক্সট ফন্ট সেটিং
(AhanLipi-Bangla14 Default text font setting)
Default text font setting ডিফল্ট টেক্সট ফন্ট সেটিং

এবং

অহনলিপি-বাংলা১৪ ডিফল্ট ইন্টারনেট ফন্ট সেটিং
(AhanLipi-Bangla14 Default Internet font setting)
Default Internet font setting ডিফল্ট ইন্টারনেট ফন্ট সেটিং







বাংলা বানান জটিল কি? 
(করে রাখা হয়েছে)
মনোজকুমার দ. গিরিশ

        বাংলা বানান জটিল কিনা তা বোধ হয় বলার অপেক্ষা রাখে না৤ কারণ বাংলা বানান জটিল করে রাখা হয়েছে৤ 

        সরল করলে তা এমন বদখত দেখাবে যে তা আর পাতে দেওয়া যাবে না৤ প্রায় হাজার বছর আগে যখন বাংলা ভাষার জন্ম সেই সময়কার এক পুথি উদ্ধার করেছেন মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী৤ তিনি নেপালের রাজদরবারের পুথিশালা থেকে এটি উদ্ধার করে আনেন(১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থশালা থেকে চর্যার একটি খণ্ডিত পুঁথি উদ্ধার করেন৤- উইকিপিডিয়া)৤ আর তা প্রকাশ করেন “হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা”(শ্রাবণ ১৩২৩ বঙ্গাব্দ৤ইং ১৯১৬খ্রিঃ) নামে৤ বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষদের প্রতিষ্ঠা হয় ১৩০১ বঙ্গাব্দ, তথা ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে৤ বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষদ প্রতিষ্ঠার ২২ বছর পরে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় এটি প্রকাশ করতে পারেন৤ তিনি এই প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন এই প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার ৩ বছর পরে(১৮৯৭)৤ 

        ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশি যুদ্ধের ২২ বছর পরে ১৭৭৮  খ্রিস্টাব্দে বিচল হরফে প্রথম বাংলা মুদ্রণের সূচনা হয়, ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড সাহেবের ইংরেজিতে লেখা A Grammar of the Bengal Language, প্রকাশের মাধ্যমে৤ যে বইয়ের বাংলা হরফ নির্মিত হয় চার্লস উইলকিনস নামক ইংরেজ সাহেবের নির্দেশনায়, এবং ছেনি হাতুড়ি দিয়ে হরফ নির্মাণ করেন পঞ্চানন কর্মকার৤ এঁরা তিন জনেই সে সময়ে মোটামুটি সমবয়সী ছিলেন, তরুণও বটে৤ এর ৬০ বছর পরে ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে আইন-আদালতে ফার্সির বদলে বাংলার প্রবর্তন হয়৤ এর ১৯ বছর পরে ভারতে সিপাহি বিপ্লব দেখা দেয়৤ এর ৩৭ বছর পরে বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষদের প্রতিষ্ঠা৤ পরিষদ প্রতিষ্ঠার ২২ বছর পরে  ১৯১৬-তে “হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা” প্রকাশিত হয়৤ এতদিনে বাংলা ভাষা ও বাঙালির ইতিহাসের মূল পাতাটির খোঁজ মিলল৤ 

ধারাবাহিকতাটি এমনি--
                ১৭৫৭-- পলাশির যুদ্ধ৤ ইংরেজদের জয়৤ ভারতের পরাধীনতার সূচনা৤
২২ বছর পরে  ১৭৭৮-- বিচল হরফের বাংলা ছাপার সূচনা
৩ বছর পরে    ১৭৮১ -- কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা
৩ বছর পরে    ১৭৮৪ -- এশিয়াটিক সোসাইটি  প্রতিষ্ঠা
১৬ বছর পরে  ১৮০০ -- ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রতিষ্ঠা
৩৮ বছর পরে  ১৮৩৮-- আইন-আদালতে ফার্সির বদলে বাংলার প্রবর্তন
১৯ বছর পরে  ১৮৫৭ -- ভারতে সিপাহি বিপ্লব৤ ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম৤
৩৭ বছর পরে  ১৮৯৪-- বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষদ প্রতিষ্ঠা
২২ বছর পরে  ১৯১৬-- হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর হাজার বছরের পুরাণ 
বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা প্রকাশ৤

        এই অতি সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে অনুমান করা যাবে যে, এদেশে ইংরেজের দখলদারি আমাদের কেবল দাসত্ব দেয়নি, দিয়েছে আধুনিকতার আলোও, অগ্রগতির সোপানও৤ ইংরেজ তার ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’ প্রতিষ্ঠা করেছিল ১৬০০ খ্রিস্টাব্দের ৩১শে ডিসেম্বর৤ সারা পৃথিবীতে ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’ কিন্তু অনেকগুলি জাতিই প্রতিষ্ঠা করেছিল-- ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ওলন্দাজ(ডাচ), ডেনিশ, পর্তুগিজ, ফরাসি, সুইডিশ, অস্ট্রেলিয়ান৤ যদিও সবগুলি যে বাংলায় এসেছিল এমন নাও হতে পারে৤ মূলত ডাচ(ওলন্দাজ) ও ব্রিটিশ দখলদারি বাংলা হরফ নির্মাণের মূল প্রেরণা৤ 

        ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ বা কলেজ অফ ফোর্ট উইলিয়াম ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর-জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলি প্রতিষ্ঠিত একটি প্রাচ্যবিদ্যা শিক্ষাকেন্দ্র ১৮০০ সালের ১০ জুলাই কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম চত্বরে এই কলেজ স্থাপিত হয় এই প্রতিষ্ঠানে সহস্রাধিক সংস্কৃত, আরবি, ফার্সি, বাংলা, হিন্দি ও উর্দু ইংরেজিতে অনূদিত হয়

 
        ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ স্থাপনের উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ আধিকারিকদের ভারতীয় ভাষায় শিক্ষিত করে তোলা। এই প্রক্রিয়ায় বাংলা ও হিন্দির মতো ভারতীয় ভাষাগুলির বিকাশ ত্বরান্বিত হয় এই সময়টির একটি ঐতিহাসিক গুরুত্বও রয়েছে ১৮১৫ সালে রাজা রামমোহন রায় পাকাপাকিভাবে কলকাতায় বসবাস শুরু করেন৤ অনেক ঐতিহাসিক এই সময়টিকেই বঙ্গীয় নবজাগরণের সূচনালগ্ন বলে অভিহিত করেছেন৤ ১৭৮১ সালে কলকাতা মাদ্রাসা, ১৭৮৪ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি ও ১৮০০ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রতিষ্ঠা ছিল বৌদ্ধিক চর্চাকেন্দ্র হিসেবে কলকাতা মহানগরীর উত্থানের আদিপর্ব।”--উইকিপিডিয়া 

        হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়ের অপরিসীম ও অক্লান্ত উদ্যোগ না হলে আজও হয়তো আমাদের হাতড়াতে হত বাংলা ভাষার জন্ম নিয়ে, কবে তার সূচনা হয়েছিল তার খোঁজে৤  

        হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ছিলেন সংস্কৃত পণ্ডিত, কিন্তু তিনি বাংলার জন্য যতটা চিন্তা করেছেন এমন দেখা পাওয়া ভার৤ বাংলা ছিল তাঁর মন, বাংলা ছিল তাঁর প্রাণ, বাংলা তাঁর শয়নে স্বপনে ছিল একমাত্র ধ্যান জ্ঞান৤ এমন ছিল বলেই আজ আমরা বলতে পারি বাংলার ঠিকুজির কথা, নয়তো এ ইতিহাস হয়তো আজও অজানা থেকে যেত৤ 

        তিনি যা বলেছেন, তা মানতে আজকের এযুগেও আমাদের কষ্ট হয়, বাঁধো বাঁধো ঠেকে৤ তিনি বলেছেন, “অনেকের সংস্কার বাংলাভাষা সংস্কৃতের কন্যা৤... আমি কিন্তু সংস্কৃতকে বাংলার অতি-অতি-অতি-অতি-অতি-অতিবৃদ্ধ প্রপিতামহী বলি৤ পাণিনির সময় সংস্কৃতকে ভাষা বলিত অর্থাৎ পাণিনি যে সময় ব্যাকরণ লেখেন তখন তাঁহার দেশে লোকে সংস্কৃতে কথাবার্তা কহিত৤ তাঁহার সময় আর-এক ভাষা ছিল তাহার নাম 'ছন্দস্' __ অর্থাৎ বেদের ভাষা৤ বেদের ভাষাটা তখন পুরানো, প্রায় উঠিয়া গিয়াছে৤ সংস্কৃত ভাষা চলিতেছে৤ পাণিনি কত দিনের লোক তাহা জানি না, তবে খৃস্টপূর্ব ষষ্ঠ, সপ্তম শতকের বোধ হয়৤তাহার অল্প দিন পর হইতেই ভাষা ভাঙিতে আরম্ভ করে৤ বুদ্ধদেবের মৃত্যুর পরই তাঁহার চুলার ছাই কুড়াইয়া এক পাথরের পাত্রে রাখা হয় তাহার গায়ে যে ভাষায় লেখা আছে, সে ভাষা সংস্কৃত নহে;তাহার সকল শব্দই সংস্কৃত হইতে আসা, কিন্তু সে ভাষা সংস্কৃত হইতে অনেক তফাত হইয়া পড়িয়াছে৤তাহার পরই অশোকের শিলালেখের ভাষা৤ তাহার পর মিশ্রভাষা, ইহার কতক সংস্কৃত ও কতক আর-একরকম৤ একটি বাক্যে দুরকমই পাওয়া যায়৤এভাষার বইও আছে,শিলালেখও আছে৤ তাহার পর সুঙ্গ ও খারবেলদিগের শিলালেখের ভাষা৤ তাহার পর সাতকর্ণিদের শিলালেখের ভাষা৤ তাহার পর পালিভাষা৤ তাহার পর নাটকের প্রাকৃত৤ সকল প্রাকৃতের সহিত আমাদের সম্পর্ক নাই৤ মাগধীর ও ওঢ্র মাগধীর সহিত আমাদের কিছু সম্পর্ক আছে৤ তাহার পর অনেক দিন কোনো খবর পাওয়া যায় না৤ তাহার পর অষ্টম শতকের বাংলা৤ তাহার পর চণ্ডীদাসের বাংলা৤ তাহার পর বৈষ্ণব কবিদের বাংলা৤ সব শেষে আমাদের বাংলা

 
        সুতরাং সংস্কৃতের সঙ্গে বংলার সম্পর্ক  অনেক দূর৤ যাঁহারা বাংলাকে সংস্কৃতের পথে চালাইতে চান, তাঁহাদের চেষ্টা সফল হইবার সম্ভাবনাও খুব কম৤ সংস্কৃতের গতি একরূপ ছিল, এতদিনে বাংলার গতি আর-একরূপ হইয়া গিয়াছে৤ এখন বাংলাকে সংস্কৃতের দিকে চালাইবার চেষ্টা, আর গঙ্গার স্রোতকে হিমালয়ের দিকে চালাইবার চেষ্টা একই রকম৤ সাত শত বৎসর মুসলমানের সহিত একত্র বাস করিয়া বাংলা মুসলমান হইতে অনেক জিনিস লইয়া ফেলিয়াছে৤ সে-সব জিনিস বাংলার হাড়ে মাসে জড়িত হইয়াছে৤ এখন তাহাকে বাহির করিয়া দিবার চেষ্টা কিছুতেই সফল হইবে না৤ মুসলমানেরা বাংলাভাষাকে যেমন বদলাইয়া দিয়াছে, ভারতবর্ষের আর-কোনো ভাষাকে সেরূপ পারে নাই৤ আমাদের বাংলার বিভক্তি ‘রা’ ও ‘দের’ মুসলমানদের কাছ হইতে লওয়া৤ সে বিভক্তি তুমি ভাষা হইতে তাড়াইবে কী করিয়া?” (পৃঃ- ৩৬৭-৮,  অষ্টম বঙ্গীয় সাহিত্য-সম্মেলনের সাহিত্য-শাখার সভাপতির সম্বোধন, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রচনা-সংগ্রহ, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ)৤ 

        তাঁর এই বাংলাভাষার আদি ইতিহাস উদ্বোধনে বাঙালি তার শিকড়ের সন্ধান পেয়েছে, কিন্তু তাঁর অভিমত অনুসারে বাংলাভাষাকে “বাংলা” করার দিকে বাঙালির তেমন কোনও উৎসাহ দেখা যায়নি৤ বরং তার আমলে তাঁকে কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে৤ ব্যাপারটা এমন মনে হতে পারে যে বাংলা বুঝি হিন্দুর ভাষা, সেখানে মুসলমানের কোনও মৌলিক অধিকার নেই৤ কিন্তু বস্তুত বাংলার যা কিছু বিকাশ ঘটেছে তা মুসলিম পৃষ্ঠপোষকতায়৤ মুসলিম আমলে সুলতানদের অবদান বাংলা ভাষার বিকাশে প্রভূত সহায়তা করেছে৤ এমনকী এযুগে বাংলাকে একটা দেশের রাষ্ট্রভাষা করার কৃতিত্ব এই মুসলমানদেরই৤ 

        বাংলাভাষার উদ্ভব বৌদ্ধ আমলের শেষ দিকে, তার প্রয়োগ মুসলিম আমলে, উন্নয়ন খ্রিস্টানদের হাতে ইংরেজ আমলে, আর বাংলাভাষার শাসনকর্তা হিন্দুরা, অর্থাৎ বাংলাভাষা এদের সকলের কেবল সংস্কৃত শাসন দিয়ে তাকে আবদ্ধ করা চলে না৤
        ইংরেজি ভাষা “ইংরেজি” হয়েছে তার প্রাচীন ল্যাটিন ঝোঁক ত্যাগ করে, বাংলাভাষা “বাংলা” হবে তার সংস্কৃত ঝোঁক ত্যাগ করলে৤ 

        বাংলাভাষাকে হিন্দুরা অতীতে তেমন আমল দেননি, বরং হেলফেলা করেছেন অনেক, কারণ বাংলা ছিল ব্রাত্য ভাষা৤ আজকাল যেমন ইংরেজি শিখলে, বা ইংরেজি বলতে পারলে সমাজে একটা আলাদা মান্যতা পাওয়া যায়, তেমনি অতীত দিনে সংস্কৃতের সে মান্যতা ছিল, আর বাংলার প্রতি ছিল অবহেলা, অবজ্ঞা৤ বাংলা সেকালে জাতে উঠতে পারেনি৤ ভাষা বিজ্ঞানী প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ডঃ পবিত্র সরকার বলেছেন, "স্কুলের ব্যাকরণ তাঁর[রবীন্দ্রনাথের] একদম পছন্দ ছিল না৤ তখনকার স্কুলের ব্যাকরণে প্রায় ধরেই নেওয়া হত যে, বাংলা ভাষায় সংস্কৃত থেকে বানানসুদ্ধ ধার-নেওয়া 'তৎসম' শব্দ ছাড়া আর বাকি যা আছে, সে সব শব্দ জাতে খুব নিচু৤ কাজেই ব্যাকরণে তাদের খবর নেওয়ার দরকার নেই৤ ব্যাকরণ শুধু আলোচনা করবে তৎসম শব্দ নিয়ে, কারণ তৎসম শব্দ 'সাধু ভাষায়' ব্যবহৃত হয়৤ সাধুভাষাই ছাত্রকে লিখতে হবে৤ 'অসাধু' ভাষায় লেখা যায় না, কথা হয়ত বলা যায়৤ স্কুলের ব্যাকরণ, পণ্ডিতদের লেখা ব্যাকরণ ওই 'বিশুদ্ধ সংস্কৃত অংশের' ব্যাকরণ ছাড়া আর কোনও ব্যাকরণ বোঝে না৤ এইখানেই রবীন্দ্রনাথের ছিল আপত্তি৤" [রবীন্দ্রনাথ যে ব্যাকরণ লিখতে চেয়েছিলেন__ পবিত্র সরকার৤ আজকাল, ৮ মে, ১৯৯৪, রবিবাসর৤ (০৮৤০৫৤১৯৯৪)৤ পৃঃ-ঘ]৤ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেও এখনও অবশ্য বাংলা যে ‘জাতে’ উঠেছে সে কথা জোর করে বলা যাবে না৤ 

        বাংলাদেশের লেখক গোলাম মুরশিদ বলেছেন, ‘তখনকার সংস্কৃত শাস্ত্রেরও বলা হয়েছে "বঙ্গে যেও না, কারণ সেটা হল ব্রাত্যদের দেশ"৤’ (হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি__গোলাম মুরশিদ, পৃঃ-২২)৤ব্রাত্যদের দেশে তো ব্রাত্যরাই বাস করে! তাদের ভাষাও ব্রাত্য ভাষা, আর সেটা “বাংলা”৤ যদিও এযুগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখের চর্চায় সেই ভাষাই বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষা, এবং মধুরতম ভাষাও৤ বাংলা ভারতের শ্রেষ্ঠ ভাষা, এবং সাহিত্যে ভারতের একমাত্র নোবেল পুরস্কার পাওয়া ভাষা, মাধুর্যে বিশ্বের এক নম্বর ভাষা৤ দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবর(২২এপ্রিল, ২০১০)...is to be believed, Bengali has been voted the  sweetest language in the world  এমন এক বার্তা কিছুদিন আগে ছড়িয়েছিল নেটে৤ ...China, they have enormous respect for the language and for Tagore. A few years ago, I was asked to address a gathering in Bengali. It made me extremely proud. I hope the news is true, said author Dibyendu Palit.  

        বাংলাদেশ হবার পরে, তাঁদের রাষ্ট্রভাষা বাংলা হওয়ায়, বাংলা নিয়ে কথা বলার অধিকার বোধ হয় তাঁদেরই বেশি৤ তবে তাঁদের সে বাংলা কম সংস্কৃত ঘেষা৤ তাঁদের বাংলা বানান কিছুটা অন্যরকমও৤ দেখা যায় ‘ক্রিকেট’ তাঁরা কেউ কেউ লেখেন ‘কৃকেট’৤ হজরত=হযরত, মজুত=মওজুত, নামাজ=নামায, কোরান =কুরআন ইত্যাদি৤ বানান নিয়ে এসকল শব্দে সমস্যা আছে, সমস্যা আছে আরও বহু বানান নিয়ে৤ কিন্তু আমাদের সবাইকে ভেবে দেখতে হবে এসব সমস্যা কী করে দূর করা যায়৤ ‘ক্রি’ এবং ‘কৃ’ এই দুরকম লেখার ব্যবস্থা রোধ করতে হবে৤ ব্যবস্থা এমন করতে হবে যে, শুধু মাত্র এক রকম বানানে লেখা যাবে, অন্য আর কোনও রকম করে লেখা যাবে না, চেষ্টা করলেও ভিন্ন বানান লেখা যাবে না৤ 

        যদি বাংলা থেকে ‘ঋ’ বর্ণ এবং তার চিহ্ন(ৃ) বর্জন করা যায়,(কারণ “ঋ” বাংলার ধ্বনিই নয়, বাঙালিরা এই ধ্বনি উচ্চারণই করতে পারে না), তবে আর ‘কৃকেট’ লেখা যাবে না৤ সব সময়ে লিখতে হবে ‘ক্রিকেট’৤ কারণ তখন শুধু স্বরবর্ণ ‘ই’ এবং তার স্বরচিহ্ন (ি) থাকবে, আর ব্যঞ্জনবর্ণ ‘র’ এবং র-ফলা( ‌‍্র) থাকবে, তাই লেখা চলবে ‘ক্রিকেট’৤ তখন  স্বরবর্ণ ‘ঋ’ এবং তার স্বরচিহ্ন (ৃ) বাতিল হবে, তাই ‘কৃকেট’ লেখার ব্যবস্থাই থাকবে না, তাহলে “কৃকেট” লিখবে কী করে৤ এযুগে আমরা “ঌচু”(লিচু) লিখব না, লিখব ‘লিচু’৤ কারণ বাংলা বর্ণমালায় “ঌ”(লি) আর নেই৤ তাই কারও পক্ষে ‘ঌচু’ লেখা সম্ভব নয়৤ এযুগে “লিচু” লেখা বাংলা-বর্ণমালাগত কারণে বাধ্যতামূলক৤ তেমনি “ক্রিকেট” লেখা বাংলা-বর্ণমালাগত কারণে বাধ্যতামূলক করতে হবে, বানান অন্যথা করা যাবে না৤ 

        এই বাধ্যতা অন্য সকল ক্ষেত্রেও সৃষ্টি করতে হবে৤ তবেই বাংলা বানান সহজ, সরল, অনায়াস হবে৤ বাংলা নিয়ে তখন ইংরেজি মাধ্যমে পড়া ‘বাঙালি’ ছাত্রটি আর বলবে না, “ওঃ, বাংলাটা কী কঠিন!”

        তাদের মাতৃভাষা হলেও বাংলাটা তাদের কাছে (হয়তো) সত্যিই কঠিন, কারণ বাংলা লেখার ব্যবস্থা জটিল, কারণ বাংলা লিপি হল কমপ্লেক্স স্ক্রিপ্ট complex script(জটিল বর্ণ)৤ লেখার সময়ে নানা চিহ্ন হরফের ডাইনে, বাঁয়ে, উপরে, নিচে অর্থাৎ চারদিক ঘিরেই বসাতে হয়৤ ভাগ্যিস দিক চারটিই নয়তো তা আরও সব দিকে বসানো হত! ইংরেজিতে সেসব ব্যাপার নেই, হরফ পরপর লিখে গেলেই হল৤ সে তুলনায় বাংলা লেখা সত্যিই কঠিন, এবং জটিল৤ যাঁদের মাতৃভাষা বাংলা তাঁদের কাছে ব্যাপারটা তেমন হয়তো মনে না-হতে পারে, কিন্তু ঘটনা তা-ই৤ বাংলা এক-একটা হরফ যেন অন্য এক-একটা হরফকে কোলেকাঁখে, ঘাড়েপিঠে করে বয়ে বেড়াচ্ছে! পৃথিবীতে সবচেয়ে সরল লিখন পদ্ধতি হল রোমান লিপির লেখা৤ তাই সারা বিশ্বজুড়ে রোমানলিপির এত কদর৤ চাইকী ইংরেজি সংখ্যা ভারতের সংবিধানে গৃহীত সংখ্যা৤ হিন্দিতে কিছু লেখা হলেও সংখ্যা হবে ইংরেজির৤ 

        হরফকে চারিদিক থেকে ঘিরে লেখার ব্যাপার ছাড়াও বাংলায় আছে যুক্তবর্ণ, তার সংখ্যা কম করে ৩৯৫টি, আবার এগুলির মধ্যে মণ্ডহরফ অনেকগুলি৤ সেই মণ্ড রপ্ত না করলে বাংলা লেখাপড়া করা যাবে না৤ এসব নিয়ে সেযুগে বাংলা-জানা ইংরেজ পণ্ডিতেরাও চিন্তিত ছিলেন৤ এসব সহজ করার জন্য বিদ্যাসাগর মহাশয়ের আমলে স্কুলের পাঠ্য বই প্রকাশনার সঙ্গে দীর্ঘকাল জড়িত ইংরেজ পাদ্রি জন মারডক(John Murdoch) ‎১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে(১৮৫৫-তে ‘বর্ণপরিচয়’ প্রকাশের দশ বছর পরে) বাংলা লিখন পদ্ধতিকে সরল করার জন্য এক চিঠিতে বিদ্যাসাগরের কাছে কিছু মূল্যবান প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যদিও তা এতাবৎ কার্যকর হয়নি৤ তিনি এমনও বলেছিলেন যে এই সব প্রস্তাব আজ উপহাস্য মনে হতে পারে, তবে ভবিষ্যতে এটা কাজে লাগবে, কেবল তা সময়ের অপেক্ষা৤ অপেক্ষা কম হয়নি কিন্তু সেদিকে বাংলা লেখার অগ্রগতি কমই হয়ছে৤ তবে আধুনিক কম্পিউটার ফন্টে(লেখার হরফসমূহ) ক্রমে তা কার্যকর হবার দিকে এগোচ্ছে৤ অর্থাৎ বাংলা লেখার ব্যাপারটা একটু একটু করে সহজ হয়ে চলেছে৤ সর্বত্র হয়তো সেটা হয়নি, তবে মানুষ সহজ ব্যাপারটাকে ক্রমে গ্রহণ করছেন৤ আগে যেভাবে ‘উষ৏ ’ লেখা হত এখন তা অনেকটা পালটে গেছে, সহজ হয়েছে৤ “ষ৏ ” লিখলে বোঝাই যায় না, কোন্‌ হরফের সঙ্গে কোন্‌ হরফ যুক্ত হয়ে এই দলাটার সৃষ্টি হয়েছে৤

প্রাচীন দিনে ‘ণ’() লেখা হত 

ল-এর( )মতো করে৤ দুটি বর্ণের মধ্যে তফাত বোঝা কঠিন হত৤

 ‘ণ’( ) লেখা হত  মাত্রা বাদে, 
আর ল-( ) লেখা হত মাত্রা সহ, তফাত এইটুকু মাত্র৤ 
তাই ষ্‌+ণ=ষ৏  গঠন বোঝাও কঠিন হত৤ দেখে এটি ষ্‌+ঞ = ষ৏    মনে হতে পারে, কিন্তু আসলে তা নয়৤ "স্মরণযোগ্য: ঞ-এর আকৃতিগত প্রভাবেই পঞ্চদশ শতাব্দীর
 [ ]


 (ষ্+ণ), অষ্টাদশ শতকে এসে ক্রমান্বয়ে 

 -রূপে পরিণত হয়েছিল" বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া "বাংলা পাণ্ডুলিপি পাঠসমীক্ষা" [বাংলা একাডেমী:ঢাকা, বাংলাদেশ, প্রথম প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি-১৯৮৪, পৃঃ৪৪]। 
 
        ষ+ণ মিলে কেমন করে তা ষ৏ হল তা একটু অনুমান করা যাক--  
   [ ]

         

       অনেক সময়ে মানুষ বা পশুর মধ্যে দেখা যায় তারা পেটে, বা মাথায় জোড়া লেগে আছে, মণ্ডহরফ যেন তেমনি হরফের জোড়া twin, ছাড়ানোর উপায় নেই৤ কিন্তু মানুষকে অপারেশন করার মতো, যদি এই জুড়ে যাওয়া (বা জুড়ে দেওয়া) হরফগুলি জোড়া ছাড়িয়ে আলাদা করে লেখা যায়, তবে বাংলা লেখা অনেক সহজ হয়৤ যদি ষ৏ =ষ্ণ লেখা যায় তবে এই জোড়া খুলে যাবে, এবং লেখা যে অনেক সহজ হবে তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে৤ ষ৏ =ষ্ণ লিখলে এটি যে ‘ষ’ এবং ‘ণ’ এই দুটি বর্ণ মিলে গঠিত হয়েছে তা সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়৤ 

        এমনি করে যদি অন্য সকল জোড়া-লাগা হরফকে, অপারেশন করে, জোড় ছাড়িয়ে সরল করে লেখা হয়, তবে বাংলা লেখা অনেক সহজ, সুন্দর, সরল হবে৤ যদিও বর্তমান প্রচলিত অভ্যাসকে তা জোর ধাক্কা দেবে, মন সায় দিতে চাইবে না, যেমন উষ৏ =উষ্ণ লেখা মন মানতে চাইবে না৤ কিন্তু এই আধুনিক যুগে এটাই পথ৤ আমরা আধুনিক হতে চাইব, মুখে অনেক কিছু বলব, কিন্তু কাজের বেলায় আধুনিকতাকে স্বীকার করতে দ্বিধাগ্রস্ত হব, এটা চলে না৤ 

        যদি আমরা আধুনিক হতে না চাই? তবে কী হবে? তবে আমরা পিছিয়ে পড়ব৤ পৃথিবী এগিয়ে যাবে, আর আমরা আমাদের প্রচীনতা নিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকব৤ ষ৏  বা ষ্ণ দুটিই বাংলা লেখার রূপ, দুটি লেখাই অভ্যাস সাপেক্ষ৤ তাই অকারণে দলাপাকানো ব্যবস্থায় আটকে থাকা কেন? অনভ্যাসের কারণে ষ৏ অপেক্ষা ‘ষ্ণ’ দেখতে খারাপ লাগবে৤ দাড়িগোঁফওলা লোককে দাড়িগোঁফ কামানো অবস্থায় হঠাৎ দেখলে তাকে সুন্দর মনে হবে না, বরং অদ্ভুত মনে হবে৤ দাড়িগোঁফ কামানো মধ্যবয়স্ক রবীন্দ্রনাথের ছবি দেখে কেউই অনুমান করতে পারেন না, এ ছবি রবীন্দ্রনাথেরই৤ 

        প্রায় সাত দশক আগে কোরিয়ার লোকেরা তাদের লেখার আমূল পরিবর্তন করে সহজ সরল করেছেন৤ তাঁদের কথা শোনা যাক--“The writing problem in the Republic of Korea has been  solved, and typewriters have been devised for writing with a horizontal left-to-right  adaptation of the traditional alphabet. It is supposed to be ‘so highly scientific in principle  that even the International Phonetic Symbols have to bow before the Korean alphabet’  (John Starr Kim, in ‘Ink-Remington Rand’ vol. III, no.4, September 1947. Mr. Kim was  one of the technicians who developed the Korean typewriter Keyboard). Formerly, the  alphabet – which was invented in A.D. 1446 by king She-Jong – was used vertically in columns from right to left in conglomerated syllabic units imitating Chinese characters.”(p-34) --The use of vernacular language in education – UNESCO, Paris-1953. 

        আমরা তেমন বৈপ্লবিক কিছু করতে না পারি, একটু সহজ সরল করে লিখতে তো পারি৤ আমাদের লেখা হয় বাম থেকে ডাইনে, পৃথিবীতে হিব্রু, আরবি, উর্দু ইত্যাদি দু-একটি ভাষা বাদে সকল ভাষার লিখন ব্যবস্থাই এমনি বাম থেকে ডাইনে৤ যদি আমরা জোড়া-লাগা হরফের জুড়ে যাওয়া বা লেপটে যাওয়া বন্ধ করতে পারি, তাতে লাভ আমাদের৤ কম বাংলা জানে যারা, তারা দেশীয় কিংবা বিদেশী সকলেই সহজে বাংলা লেখাটা বুঝতে পারবে সহজে৤ এটা বিশাল লাভ৤ বাংলা লেখাপড়ার জগতটা এসব মানুষের কাছে অন্ধকার হয়ে থাকবে না৤ সহজ যুক্তবর্ণে লিখে বাংলার বাইরে বাস করা অল্প বাংলা জানা একজনকে একটা বড় লেখা পাঠিয়েছিলাম নেটে,  সে পড়ে জানিয়েছে সবই সে বুঝতে পেরেছে৤ এই যে বিশ্ব সংযোগের সুবিধা, তা আমরা হারিয়ে বসে আছি৤ বাংলা লেখার ব্যবস্থা সরল করে সেই বন্ধ দুয়ার কেন খুলে দেব না? তাদের কাছ থেকে কেন বাংলাটা লুকিয়ে রাখব, বাংলাটা কেন সিন্দুকে তালা বন্ধ থাকবে?

        আজকাল মধ্যবিত্ত তো বটেই নিম্নবিত্তেরা অবধি ছেলেমেয়েদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়ায়, তার অমোঘ ফল এই যে তারা বাংলাটা খুব কম জানে৤ এই অতি বিপুল সংখ্যক ‘অল্প বাংলা জানা’ মানুষকে আমরা হারাতে চাই না৤ নেটের জগতে আজকাল বাংলারও অতি বিরাট বিস্তার, সেই বিস্তারকে সফলভাবে কাজে লাগাতে হলে বাংলা লেখার ব্যবস্থাকে সহজ সরল করতে হবে৤ ইংরেজিতে এ বি সি ডি করে হরফ পরপর বসিয়ে শব্দ লেখার সুবিধার জন্য হরফ পরিচয়ের পরে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা যেকোনও ইংরেজি শব্দ অন্তত বানান করে পড়তে পারে৤ ইংরেজিতে এই যে অভাবিত সুবিধা, বাংলা লেখার ব্যবস্থাপনার নতুন বিন্যাসের ফলে তার যদি কিছুটাও বাংলায় আমদানি করা যায়, তবে লোকসান তো নেই৤ বাংলাটা রোমান তথা ইংরেজি হরফে লেখার কথা বলছি না, বাংলা লেখাটা বাংলা হরফেই হবে, তবে সরল পদ্ধতিতে, প্রাচীন/চলতি বিদঘুটে উপায়ে নয়৤ মনটাকে শুধু একটু নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নেবার মানসিকতা তৈরি করে নিতে হবে, তাহলেই সমস্যা মিটবে৤ 

        ‘মি—এ’ না লিখে ‘মিত্র’ লিখলে বোঝা সহজ৤ নয়তো “—এ”-কে স্ববর্ণের ‘এ’ মনে হয়৤ আবার “দ—ও” না লিখে ‘দত্ত’ লিখলে ত+ত বোঝা যায় সহজে, নয়তো এটা(—ও) স্ববর্ণের “ও” মনে হবে৤এমনিভাবে “উষ৏ ” লেখা হবে ‘উষ্ণ’৤ বাংলায় আছে প্রায় ৩৯৫টি যুক্তবর্ণ তার অনেকগুলিই দলা পাকানো মণ্ডহরফ৤ সেই মণ্ডা এতকাল আমরা খেয়ে এসেছি, এবার দলা ছাড়িয়ে সোজা করে নেব হরফগুলিকে৤ তাই লেখা হবে-- শক্ত, একবগ্গা, সঙ্গ, আচ্ছা, সজ্জা, এককাট্টা, আড্ডা, উত্তম, খদ্দর ইত্যাদি৤ 

এমনিভাবে লেখা যাবে-- 

ক্ক,খ্খ,গ্গ,ঘ্ঘ,চ্চ,জ্জ,ঝ্ঝ,ট্ট,ড্ড,ণ্ণ,ত্ত,থ্থ,দ্দ,ধ্ধ,ন্ন,প্প,ফ্ফ,ব্ব,ভ্ভ,ম্ম ইত্যাদি৤  

        এভাবে কম্পিউটারে বাংলা লেখার জন্য একটি ফন্ট তৈরি করা হয়েছে৤ ফন্ট হল কম্পিউটারে লেখালিখির জন্য হরফসমূহ৤ কিছুদিন আগেও এই ফন্ট ছিল ‘নন-ইউনিকোড’ ফন্ট, এখন বাংলার জন্যও তৈরি হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের “ইউনিকোড” ফন্ট৤ বাইরের চেহারায় পরিবর্তন দেখা না গেলেও আভ্যন্তরীণ ভাবে তা কারিগরি দিক থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং অনেক উন্নত৤ যদিও ছাপার জন্য হাতে কম্পোজ করার দিনের থেকে বাংলা হরফের বাহ্যিক গঠনগত কোনও পরিবর্তন হয়নি৤ এর ফলে বাংলা লেখার ব্যবস্থা একইরকম ভাবে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে৤ এগুলিকে বলা যাবে ফার্স্ট জেনারেশন বাংলা ফন্ট৤ আভ্যন্তরীণ কারিগরির যতই পরিবর্তন ও উন্নয়ন হোক, বাইরে সে জুবুথুবু হয়েই রয়ে গেছে৤ দলা পাকনো, জোড়ালাগা লিপ্তলিপি থেকে তার কোনও উত্তরণ ঘটেনি৤ 

        সরল করে লেখার ব্যবস্থা সমন্বিত যে ফন্ট সেগুলিই হল, সেকেন্ড জেনারেশন বাংলা ফন্ট৤ এই ফন্ট ব্যবহার করে বাংলা লেখা অনেকটাই সহজ সরল হয়ে উঠবে৤ কিছু এমনি লেখা দেখা যাক-- 

















        ধারক বাক্য[প্যানগ্রাম](Pangram="every letter")৤ বাংলা ইউনিকোড ওপেন টাইপ ইউ.আই. ফন্টে একটি বাক্য লিখে দেখানো যাক, যেখানে বাংলা সকল বর্ণ-- স্বরবর্ণ(১১), ব্যঞ্জনবর্ণ(৩৯), সকল স্বরচিহ্ন (১০), সকল ব্যঞ্জনচিহ্ন তথা ফলা(৮) ইত্যাদি আছে৤

        বিষণ্ণ ঔদাসীন্যে ঊষাবৌদি বাংলাভাষায় প্রচলিত ঈশপের নিখুঁত গল্পটির ডালপালা অর্ধেক ছড়াতেই ঋতু ভুঁইঞা আর ঐন্দ্রিলা ধড়ফড়িয়ে দারুণ হৈ-হৈ করে উঠল__ ওঃ, ব্যাস্ এবার থামো তো, বুঝেছি বড্ডো পুরানো ঢঙের কেমন এক গল্প যার নীতিবাক্য হল,“মূঢ় আড়ম্বর ও আত্মশ্লাঘার ফল জীবনে বিঘ্ন ও বৃহৎ ক্ষতি”-- তাই না, এ্যাঁ? ০১২৩৪৫৬৭৮৯   ৳৫৬/-   ৉৫৬/-   



        ইংরেজির মতো একই কায়দা অনুসরণ করে যদি বাংলায় নতুন প্রবর্তিত ‘যুক্তবর্ণ ব্যবস্থায়’ লেখা হয়, তবে কিন্তু ইংরেজি হরফ-ব্যবস্থার চেয়ে তা আরও ভালোভাবে লেখা যাবে৤ যেমন, যদি ইংরেজিতে stop, school, club লিখি তবে বাংলাতে সেটাই অনেক বেশি ভালোভাবে লেখা যাবে-- স্টপ, স্কুল, ক্লাব৤ এতে ভালোটা কী হল? স্টপ লিখতে ‘স্ট’-এর ছোটো -এর উচ্চারণ হচ্ছে লঘু বা অল্প মাত্রায়৤ লেখার হরফে সেটা প্রতিফলিত(ছোটো হরফ তাই উচ্চারণও লঘু বা অল্পমাত্রার)৤ আবার স্কুল-এ ‘স্ক’-এ -এর উচ্চারণ এবারও হচ্ছে লঘু বা অল্প মাত্রায়, লেখার হরফে এবারও সেটা প্রতিফলিত, ক্লাব লেখায় তেমনি ‘ক্ল’-তে -এর উচ্চারণ হচ্ছে লঘু বা অল্প মাত্রায়, লেখার হরফে সেটাও প্রতিফলিত৤ ইংরেজিতে কিন্তু সেটা হয় না৤ ইংরেজিতে সকল হরফ সকল সময়েই পূর্ণ অবয়বে লেখা হয়৤ তাই ইংরেজিতে যুক্তবর্ণ বা যুক্তধ্বনির উচ্চারণের সঙ্গে লিখনের সাযুজ্য কম থাকে৤ ইংরেজিতে কোনও বর্ণের উচ্চারণ লঘু হলেও হরফ কিন্তু সেই পূর্ণ অবয়বেরই থাকে৤ বাংলায় সেটা না হয়ে, লঘু উচ্চারিত ধ্বনির বর্ণ/হরফ-- লঘু তথা ছোটো হয়, তাই বাংলা যুক্তবর্ণের নতুন লিখন পদ্ধতি ইংরেজির চেয়ে বেশি যুক্তিগ্রাহ্য হয়েছে৤ 

        বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণ সহজ, কারণ প্রতিটি ব্যঞ্জনের সঙ্গে ‘অ’ অদৃশ্যভাবে লিপ্ত থাকে (inherent), নয়তো ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণ কঠিন৤ বাংলায় এই লিপ্তি অপসারিত হয় যখন তা যুক্তবর্ণে একীভূত হয়, যেমন-- স্ট,স্ক,ক্ল৤ অর্থাৎ বাংলা বর্ণমালা সেমি এ্যালফাবেটিক হয়েও তা নতুন উপায়ে যুক্তবর্ণ গঠনে-- লিপ্ত ‘অ’ বিয়োজন ব্যাপারটি স্পষ্ট করে তোলে৤ ইংরেজিতে তা ঘটে না৤ ইংরেজি হরফ সেখানেও যথাযথ অবয়বের থাকে, কারণ ইংরেজি পূর্ণ এ্যালফাবেটিক চরিত্রের, তাই ইংরেজিতে বর্ণের সঙ্গে ‘অ’ ধ্বনি যোজনা তথা ‘অ’-লিপ্তি(inherence) ব্যাপারটি নেই৤ 


        আরও উন্নত সেকেন্ড জেনারেশন ফন্ট ‘নীরবিন্দু-বাংলা১৪’ ব্যবহার করে লেখা-- 


  






বিষণ্ণ ঔদাসীন্যে ঊষাবৌদি বাংলাভাষায় প্রচলিত ঈশপের
নিখুঁত গল্পটির ডালপালা অর্ধেক ছড়াতেই ঋতু ভুঁইঞা
আর ঐন্দ্রিলা ধড়ফড়িয়ে দারুণ হৈ-হৈ করে উঠল
__ ওঃ, ব্যাস্ এবার থামো তো, বুঝেছি বড্ডো পুরানো ঢঙের
কেমন এক গল্প যার নীতিবাক্য হল, “মূঢ় আড়ম্বর ও
আত্মশ্লাঘার ফল জীবনে বিঘ্ন ও বৃহৎ ক্ষতি”--
তাই না, এ্যাঁ? ০১২৩৪৫৬৭৮৯   ৳৫৬/-   ৉৫৬/-       


        তবে বাংলা লিখনব্যবস্থা এখানেই থেমে থাকলে হবে না৤ তা আরও উন্নত করতে হবে, এই উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে থার্ড জেনারেশন বাংলা ফন্ট৤ সে ফন্টে অবশ্য বাংলা পড়তে হবে “বাংলা নতুন-বানান” প্রকল্পটি পড়ে নিয়ে৤ নয়তো এর লেখালিখি বোঝা যাবে না৤ একটু উদাহরণ দেখা যাক-- 


      















  আরও কিছু উদাহরণ দেখা যাক--

নতুন বানানে ধারক বাক্য:-- (‘অহনলিপি-বাংলা১৪’ ফন্টে পড়তে হবে)

বীশন্ন ওউদাশীন্ন৙ উশাবউদী বাংলাভাশায় প্‍রচলীত ইশপ৙র নীখুঁত  
গল্পটীর ডালপালা অ৒ধ৙ক ছড়াত৙ই ৒রীতু ভুঁইয়াঁ আর ওইন্দ্‍রীলা
ধড়ফড়ীয়৙ দারুন হই-হই কর৙ উঠলৗ-- ওঃ, ব৙঄স্ এবার থামৗ তৗ,
বুঝ৙ছী বড্ডৗ পুরানৗ ঢঙ৙র ক৙঄মৗন এাক গল্প জার নীতীবাক৚ হল,
“মুঢ়৹ আড়ম্বর ও আত্তশ্লাঘার ফল জীবন৙ বীঘ্ন ও ব্‍রীহৎ খতী”--
তাই না, এ৙঄৺? ০১২৩৪৫৬৭৮৯   ৳৫৬/-   ৉৫৬/-   



এটি নীরবিন্দু-বাংলা১৪ ফন্টে লিখে দেখা যাক--

বীশন্ন ওউদাশীন্ন৙ উশাবউদী বাংলাভাশায় প্‍রচলীত
ইশপ৙র নীখুঁত গল্পটীর ডালপালা অ৒ধ৙ক ছড়াত৙ই
৒রীতু ভুঁইয়াঁ আর ওইন্দ্‍রীলা ধড়ফড়ীয়৙ দারুন
হই-হই কর৙ উঠলৗ-- ওঃ, ব৙঄স্ এবার থামো তৗ,
বুঝ৙ছী বড্ডৗ পুরানৗ ঢঙ৙র ক৙঄মৗন এাক গল্প
জার নীতীবাক৚ হল, “মুঢ়৹ আড়ম্বর ও আত্তশ্লাঘার
ফল জীবন৙ বীঘ্ন ও ব্‍রীহৎ খতী”-- তাই না, এ৙঄৺?
০১২৩৪৫৬৭৮৯   ৳৫৬/-   ৉৫৬/-   





   







উপরের উদাহরণটিতে প্রথম লাইনের  “প্‍রচলীত” কথাটি  .JPG  ফর্মাটে সঠিকভাবে আনা গেল না৤ 


     তবে এখানেই শেষ করলে হবে না৤ আমাদের আরও এগোবার চিন্তা করতে হবে৤ ইংরেজিতে লেখার সময়ে হরফ পাশাপাশি লিখে গেলেই হয়৤ সেখানে এক-একটা হরফকে ঘিরে নানা চিহ্ন বসানোর দরকার নেই৤ এই যে সরল লিখন পদ্ধতি তাই হল আদর্শ লিখন পদ্ধতি, সে জন্যই সারা পৃথিবীতে ‘রোমান’ হরফের এত কদর৤ বংলা লেখার ব্যবস্থা তেমন করতে পারলে বাংলা লেখাও খুব উন্নত হবে৤ সে চেষ্টা আমাদের করতে হবে, তবে এখুনিই তা করা যাবে না৤ ভবিষ্যতে তা যাতে হয় তেমনি পরিকল্পনা এখন থেকেই করে এগোতে হবে৤ ফার্স্ট জেনারেশন বাংলা ফন্টে এখন লেখা চলছে, এর ঠিক পরবর্তী ধাপ সেকেন্ড জেনারেশন বাংলা ফন্ট, সেটার দিকেই আপাতত এখন আমাদের এগোতে হবে৤ অহনলিপি-বাংলা১৪ ফন্ট হল সেই ফন্ট৤ 

        তার পরের ধাপ হল থার্ড জেনারেশন বাংলা ফন্ট, বাংলা ফন্টের তৃতীয় প্রজন্ম৤ সে ফন্টে এর পরে যেতে হবে৤ অনলিপি-বাংলা১৪ ফন্টে এই তৃতীয় প্রজন্মের লিখন ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা আছে৤ 

        শেষ অবধি আমাদের ফোর্থ জেনারেশন বাংলা ফন্টে পৌঁছোতে হবে সেটাই হবে আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য৤ অহনলিপি-বাংলা১৪ ফন্টে সেভাবে লেখা যাবে, এবং নীরবিন্দু-বাংলা১৪ ফন্টে আরও উন্নতভাবে লেখা যাবে সকল হরফের ঊর্ধ্ব রেখা, যেমন ‘ই,ঈ,উ,ঊ,ঐ,ঔ,ট,ঠ’-এর ঊর্ধ্ব রেখা, মাত্রার সমরেখায় আবদ্ধ রেখে-- 

“ই,ঈ,উ,ঊ,ঐ,ঔ,ট,ঠ” 
বই, বট, টব, ঐরাবত, ঔষধ, ঠায়,
অআইঈউঊঋএঐওঔ৤ 
কখগঘঙচছজঝঞটঠডঢণতথদধনপফবভম
যরলশষসহড়ঢ়য়ৎঅংঅঃঅঁ







       বাংলা চূড়ান্ত ফন্ট তথা ফোর্থ জেনারেশন বাংলা ফন্টে লেখা হবে ইংরেজির মতো কেবলমাত্র হরফ পাশাপাশি বসিয়ে, কোনও হরফের গায়ে অন্য কোনও হরফ মিশবে না, স্পর্শ করবে না, দলা পাকবে না৤ ইংরেজি তথা রোমান হরফে লেখার ঋদ্ধ পদ্ধতিই হবে আমাদের লক্ষ্য৤ সে ফন্টে তথা ফোর্থ জেনারেশন বাংলা ফন্টে লিখলে তা কেমন দেখতে হবে, তার একটু উদাহরণ দেখা যাক -- 

আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে৤


আমআদএর দএশএ হবএ শএই ছএলএ কবএ,
কথআয় নআ বড় হয়এ কাজএ বড় হবএ





আমআদএর দএশএ হবএ শএই ছএলএ কবএ,
কথআয় নআ বড় হয়এ কাজএ বড় হবএ


        সেদিন নিঃসন্দেহে বাংলা লেখার সত্যিকারের মুক্তি ঘটবে৤ 


এখনও এব্যাপারে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার আছে৤ তাছাড়া, নেটে যদি পিএনজি ফাইল করে দেখাতে হয় তবে তা সেই সফ্‌টওয়্যারে সাপোর্ট দেয় না৤ ফলে তা টেক্সটে লেখা গেলেও নেটে দেখানো যাচ্ছে না৤ চতুর্থ প্রজন্মের সেই ফন্ট তো কোন্‌ সুদূরে তাই তা কব্‌জা করতে সময় লাগবে৤ তখন মূল ফন্টের গঠনই আলাদা হবে, কিবোর্ড আলাদা হবে৤ আর একটা কথা হল, টেক্সটে এবং নেটে ফন্ট সাপোর্ট একইরকম নয়, কিছুটা আলাদা হয়৤ তবে এখানে ব্যাপারটার কিছুটা ধারণাটা দেওয়া গেল৤



আজ অবশ্য এমনি করে লেখা আমাদের অবাক করে দেবে, কিন্তু ভবিষ্যতের মানুষ সেই ধরনের লেখায় লিখেই পড়াশুনা, লেখাপড়া করবে, তাদের কাছে এটা কোনও অবাক কাণ্ড তো হবেই না, বরং তা অতি স্বাভাবিক বলে বিবেচিত হবে৤ তেমন সুখের দিন কবে আসবে, যেদিন দলা পাকনো, জোড়া লাগানো, একের ঘাড়ে অন্য হরফ চাপানো হরফমণ্ড দিয়ে আর বাংলা লিখতে হবে না? সেই সুখের বাংলা লেখার দিনের অপেক্ষায় আছি৤ 

        তিনটি অংশে ভাগ করে দেখানো “বাংলা নতুন-বানান” প্রকল্পটি দেখা যাবে নিচের লিংকে:

১)বাংলা নতুন-বানান Bangla Natun-Banan-প্রথম অংশ

http://banglamagna.blogspot.in/2013/02/bangla-natun-banan.html

 

২)বাংলা নতুন-বানান Bangla Natun-Banan-দ্বিতীয় অংশ

http://banglamagna.blogspot.in/2013/02/bangla-natun-banan_28.html

 

৩)বাংলা নতুন-বানান Bangla Natun-Banan-তৃতীয় অংশ

http://banglamagna.blogspot.in/2013/02/bangla-natun-banan_9016.html


        ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে নন-ইউনিকোড ফন্ট তৈরি করে তা দিয়ে লেখাটা শুরু করা হয়েছিল৤ উইন্ডোজ অপারেটিং সিসটেম ব্যবস্থায় এই “বাংলা-বই” নামক ‘নন-ইউনিকোড’ ফন্টটি তৈরি করা হয়েছে৤ তার আগেও অবশ্য MS-DOS ব্যবস্থায় বাংলা লেখার জন্য হরফ তৈরি করা হয়েছিল৤ কিন্তু সেসব ছিল খুবই অপূর্ণ ব্যবস্থা৤ যখন “ইউনিকোড” সিসটেম এলো তখন ইউনিকোড ফন্ট তৈরি করা হল, যদিও তা ছিল আমার কাছে খুবই কঠিন কাজ৤ সেই ইউনিকোড ফন্টে একটু একটু করে সংশোধন সংজোন করে অগ্রগতি হতে থাকল৤ শেষে ইউনিকোড-৫ সিসটেমে সর্বান্তিক ইউনিকোড ফন্ট তৈরি করা হল এবং ধীরে ধীরে তা পূর্ণতা পেতে থাকল৤ হরফগুলির নানা এ্যাডজাস্টমেন্ট করে ফন্টকে আরও সুন্দর ও ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হল৤ এর সঙ্গে এই ফন্ট দিয়ে লিখবার জন্য তৈরি করা হল কিবোর্ড৤ প্রথম দিকের কিবোর্ড একাধিকবার সংশোধন করে তাকে পূর্ণতা দেওয়া হয়েছে৤ তবে এখন যে অবস্থায় আছে সেটাই যে শেষ অবস্থা, আর কোনও উন্নয়ন ঘটানো হবে না, তা নয়, প্রয়োজনে অবশ্যই তা আরও পরিমার্জিত হবে৤ এভাবে দ্বিতীয় প্রজন্মের বাংলা ফন্ট, তৃতীয় প্রজন্মের বাংলা ফন্ট, এবং চূড়ান্ত অবস্থার চতুর্থ প্রজন্মের বাংলা ইউনিকোড ফন্ট করার দিকে অগ্রসর হওয়া গেছে৤ 

        এখন প্রথম প্রজন্মের বাংলা ফন্টে লেখালিখি হচ্ছে, সেটা থেকে প্রথম উত্তরণ হবে দ্বিতীয় প্রজন্মের বাংলা ফন্টে, তার পরে তৃতীয় প্রজন্মের বাংলা ফন্টে এবং চূড়ান্তভাবে চতুর্থ প্রজন্মের বাংলা ফন্টে৤ অভিমুখ ঠিক রেখে একটু একটু করে সামনের দিকে এগোতে হবে৤ 

        এখন আসুন শুরু করি আশু উত্তরণের দ্বিতীয় প্রজন্মের বাংলা ফন্টে লেখালিখি৤ 

        প্রায় একই কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানা নিবন্ধে বার বার বলতে হচ্ছে বিভিন্ন দিক থেকে ব্যাপারটা বোঝাতে৤ যাতে কী বলতে চাওয়া হচ্ছে তা পাঠকের কাছে স্পষ্ট হয়৤ 

        পাঠকদের যদি কোথাও বুঝতে অসুবিধে হয়, বা কোনও অন্য চিন্তাভাবনা থাকে তবে সেকথা জানালে তা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে৤ কথায় আছে-- 

দশে মিলি করি কাজ,
হারি জিতি নাহি লাজ৤





অহনলিপি-বাংলা১৪  ফন্ট  AhanLipi-Bangla14 font ডাউনলোড করে 
নিজেকে আধুনিক করে তুলুন৤ 

অহনলিপি-বাংলা১৪ ফন্ট হল-- 
(১)সেকেন্ড জেনারেশন ফন্ট
(২)স্মার্ট ফন্ট
(৩)বর্ণসমবায় ফন্ট
(৪)আলটিমেন্ট ফন্ট
এবং
(৫)বাংলা ফন্ট টেকনোলজির ফলিত প্রয়োগ৤
 





অহনলিপি-বাংলা১৪(AhanLipi-Bangla14) ফন্ট এবং কিবোর্ড সব সময়ে সংশোধন, সম্পাদন, ও পরিমার্জনের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে৤ তাই আগে যা লেখা হয়েছে, তাতে কিছু লিখন বিচ্যুতি চোখে পড়তে পারে৤ এজন্য যদি বিচ্যুতি চোখে পড়ে তবে কিবোর্ড দেখে নিতে হবে৤ তাহলে এর কারণ স্পষ্ট হবে৤








২টি মন্তব্য:

  1. আপনার প্রয়াস,পরিশ্রম,বাংলাভাষীদের মনে সাড়া তুলবেই,একদিন।
    শুভেচ্ছা।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. বাংলা আমার মাতৃভাষা, তা নিয়ে কিছু কাজ করার চেষ্টা করেছি, সেটা অন্যদের কাজে লাগলে, আমার শ্রম সার্থক হবে৤ আপনার শুভেচ্ছার জন্য ধন্যবাদ৤ ভালো থাকুন৤

      মুছুন