দায়টা মেধার
একটু উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা খানিক স্পষ্ট
হবে যদি লিখি--
চিহ্ন, প্রাহ্ণ এই শব্দদুটিতে কোনটা কোন্ ‘ন’ অর্থাৎ
“হ্ন” লিখতে ‘ণ’ অথবা ‘ন’ ব্যবহার করা হয়েছে? আর
“হ্ণ” লিখতেই-বা কোন্ ‘ন’ যোগ হয়েছে?
দায়টা মেধার
২১/০৯/২০১৮
শুক্রবার
দায়টা
মেধার
মনোজকুমার
দ. গিরিশ
তুমি যদি শিখতে না পারো তো তার দায় তো
তোমারই তাই নয় কি? আমি পেরেছি তুমি পারবে না কেন? ন্যায্য কথা, একদম ঠিক কথা
তবে এর পিছনে একটা ‘কিন্তু’ আছে সেটা কী?
যিনি বলেন, ‘আমরা ছেলেবেলায় বেত আর কানমলা খেয়ে এসব শিখেছি, এরা পারবে না কেন?’ হক
কথা তবে কীনা যিনি বলছেন, তাঁর জন্মদিনে সকলে ঘিরে বসে তাঁর কথা শুনছেন তিনি তো
আজ পূজ্য, তাঁর জন্মদিন পালন করা হয়, ভক্তরা তাঁকে ঘিরে থাকে তিনি অতীব মেধা
সম্পন্ন বলেই তো আজ শ্রেষ্ঠ পুরুষ, ভক্তরা তাঁকে ঘিরে বসে তার মেধার সঙ্গে অন্য
আর দশটা লোকের কি তুলনা হয়?
গভীরতর আরও একটা কথা আছে তা হল, যা সহজে
শেখা সম্ভব, তা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে শেখানোর উদ্যোগে নষ্ট হয় সময়, শ্রম এবং মেধা তার
কি সত্যিই কোনও উপযোগিতা আছে? আমরা এত ঘুরিয়ে পেঁচিয়েও শিখে ফেলেছি, তাতে আমাদের
কৃতিত্ব প্রকাশ পেলেও তাতে কিন্তু ব্যবস্থাপনার সাফল্য বা সারল্য কিছু বোঝায় না কেবলই
তা অকারণ উৎপাত সময়, শ্রম এবং মেধা নষ্টের সুপারিশ গ্রহণীয় নয়
চিহ্ন, প্রাহ্ণ এই শব্দদুটিতে কোনটা কোন্ ‘ন’ অর্থাৎ
“হ্ন” লিখতে ‘ণ’ অথবা ‘ন’ ব্যবহার করা হয়েছে? আর
“হ্ণ” লিখতেই-বা কোন্ ‘ন’ যোগ হয়েছে?
এটা কি আবার একটা প্রশ্ন হল? দেখেই তো বোঝা
যাচ্ছে,
আর
একদম
সব স্পষ্ট, এ নিয়ে প্রশ্ন করার কোনও মানে হয় না
মানে হয়, সেজন্যই তো প্রশ্ন করা নিশ্চিত
মনে পরীক্ষা দিয়ে ফার্স্ট হবার পথে কিন্তু পড়ল কাঁটা কী কাঁটা? দেখা যাক--
আর
অর্থাৎ ঠিক বিপরীত উত্তর পরীক্ষায় পাশ হবে
কি?
তাহলে আর একটা আরও কঠিন প্রশ্ন করা যাক
ষ+? =
ষ্ণ হবে? এটা যুক্তবর্ণ তাই ‘ক’ থেকে ‘হ’ অবধি যেকোন বর্ণ পরস্পর মিলিয়ে এটা হতে পারে কিন্তু কী সেটা?
‘ষ্ণ’ লিখতে কোন্ বর্ণের সঙ্গে ষ-এর ঘর-গেরস্থালি?
ষ্ণ হবে? এটা যুক্তবর্ণ তাই ‘ক’ থেকে ‘হ’ অবধি যেকোন বর্ণ পরস্পর মিলিয়ে এটা হতে পারে কিন্তু কী সেটা?
‘ষ্ণ’ লিখতে কোন্ বর্ণের সঙ্গে ষ-এর ঘর-গেরস্থালি?
দেখে তো সহজেই বোঝা যায়, এটা ‘ষ+ঞ’ তবে
বলতে গিয়ে একটু থমকাতে হবে, আগের বারে হয়নি এবারেও যদি ভুল হয়? ভুল? না, একদম
স্পষ্ট ঞ-এর পুটুলি দেখেও কেন আর থমকে থাকা? আগেরবার ভুল হয়েছে বলে এবারেও হবে?
হ্যাঁ, এটা ষ+ঞ=
ষ্ণ, ফাইনাল
ষ্ণ, ফাইনাল
প্রাচীন
দিনে ণ ( )লেখা হত ল-এর() মতো করে দুটি বর্ণের
মধ্যে তফাৎ বোঝা কঠিন হত ন= তাই ষ্
+ ণ =
ষ (ষ্ণ) গঠন বোঝাও কঠিন হত দেখে এটি ষ্ + ঞ মনে হতে পারে, কিন্তু আসলে তা নয় “স্মরণযোগ্য: ঞ-এর আকৃতিগত প্রভাবেই পঞ্চদশ শতাব্দীর
ষ (ষ্ণ) গঠন বোঝাও কঠিন হত দেখে এটি ষ্ + ঞ মনে হতে পারে, কিন্তু আসলে তা নয় “স্মরণযোগ্য: ঞ-এর আকৃতিগত প্রভাবেই পঞ্চদশ শতাব্দীর
(ষ্ণ) রূপে পরিণত হয়েছিল” বাংলাদেশের
পুথিবিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ শাহজাহান মিয়া লিখিত ‘বাংলা পাণ্ডুলিপি পাঠসমীক্ষা’
[ বাংলা একাডেমী:ঢাকা, প্রথম প্রকাশ
ফেব্রুয়ারি-১৯৮৪, পৃঃ ৪৪, অনুভাগ ১১.
(ক) ]
প্রাচীন পুথিকারেরা এমনি করে লিখতেন বলেই
তা বাংলা ছাপায় এখনও তেমনি আছে শুধরে সহজ করার কথা কারও মনে হয়েছে কি? যাঁরা
অধিকারী তাঁরা তো চর্বিত চর্বণ করার দায় চাপিয়ে দেন ষ+ণ মিললে তার মণ্ডীকৃত ছবিটা
অন্য রকম হবে কেউ যদি রবীন্দ্রনাথের ছবি আঁকে তবে আঁকিয়ের দক্ষতায় তা জীবনানন্দ
থেকে সুনীল অবধি যে কেউ হতে পারে, তাই তলায় নাম লিখে না দিলে ‘অশিক্ষিতরা’ সমস্যায়
পড়েন, কার ছবি রে বাবা!
এখেনে,
একটু সংকট আছে, তলায় হরফ পরিচিতি দেবার সুযোগ নেই যা বলবে নিজের এলেমে বলতে হবে
সে এলেম আমার মতো ভাতু বিদ্যের লোকদের থাকে না তাই ষ+ ক থেকে হ সবই হতে পারে!
বিদ্যেটা আমাদের একটু সহজে দেওয়া হোক না,
আমরা খুশি হই, লেখাপড়া শিখেছি বলে মনে আনন্দ পাই
সম্মান প্রদর্শন, কথাটা শতকরা ৯৯ভাগ লোকই
বলেন ‘সনমান’
কারণ
সম্মান এবং সন্মান প্রায় একই রকম দেখতে ছাপার টাইপের গঠন আগেকার দিনে আরও কাছাকাছি ছিল এই টাইপের গঠন সুতরাং
“সন্মান” কথাটা প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে,
‘সম্মান’ আবার কি? কথাটা তো ‘সন্মান’ হওয়াই উচিত এটাই মনের ভাব সকলের
সম্মান এবং সন্মান প্রায় একই রকম দেখতে ছাপার টাইপের গঠন আগেকার দিনে আরও কাছাকাছি ছিল এই টাইপের গঠন সুতরাং
“সন্মান” কথাটা প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে,
‘সম্মান’ আবার কি? কথাটা তো ‘সন্মান’ হওয়াই উচিত এটাই মনের ভাব সকলের
আমরা যদি সহজ করে লিখি, তাতে দোষের কিছু
নেই, বরং শেখাটা ভালো হয়, সম্মান, সন্মান যে দেশে ৭০ ভাগ লোক প্রায় নিরক্ষর,
সেখানে শিক্ষার অহমিকা নিয়ে বসে থাকা ঠিক নয়, লেখাটা সহজ হোক, যাতে লোকে সহজে পড়তে
পারবে, লিখতে পারবে শিক্ষা এখন আর বিশেষ পরিসীমায় আটকে নেই, ইংরেজ আসার পরে, তারা
বাংলা ছাপার হরফ তৈরি করে বাংলা ছাপার ব্যবস্থা করার ফলে দেশে এক শিক্ষা উৎসব শুরু
হয়ে গেছে বাংলা ছাপার হরফ তৈরি করে বাংলা ছাপার ব্যবস্থা করার কথা কিন্তু আমাদেরই,
তা আমরা করতে পারিনি সুতরাং যা অভাবিত ভাবে পাওয়া গেছে তার সদ্ব্যহার করার উদ্যোগ
তো আমাদের নিতে হবে
বাংলা ছাপার হরফ যে-জটিল যুক্তবর্ণের দলায়
এতকাল আটকে ছিল, তা-থেকে বেরিয়ে আসা গেছে মণ্ড হরফের দলা স্বচ্ছ হয়েছে, সহজ
হয়েছে, সুন্দর হয়েছে, স্পষ্ট হয়েছে এবার সেটা আমরা সকলের স্বার্থে ব্যবহার করে শিক্ষার
সংকুচিত অপরিসর ক্ষেত্রটিকে ব্যাপ্ত করে তুলব সকলের জন্য শিক্ষা এবার সত্য
হোক
‘দায়টা মেধার’ নয়, বাংলা ছাপার হরফগঠন-ব্যবস্থার
দায়টা পদ্ধতির
শিশুরা পারে না, এমন নয় পারতে দেবার সহজ
ব্যবস্থাই নেই, একটা জটিল অপূর্ণ লিখন এবং মুদ্রণ ব্যবস্থার উপরে ভর করে বাংলা
চলছে
এবার সেটা সহজ সুন্দর হোক পারাতে পারতে
হবে, পারাতে জানতে হবে, তবে তো! পদ্ধতি আগে
নিজে দক্ষ হোক, তবেই সবাই পারবে, অনায়াসে পারবে, বিনা অয়াসে পারবে সবাই পারবে এলেবেলে
আমি, তুমি সকলে
স্নো, পাউডার, রুজ, লিপস্টিক লাগানো
কৃত্রিম চেহারাটা চাই না, সাদামাটা সহজটা চাই তবেই পারবে সবাই পদ্ধতি(System) নিজে উপযুক্ত হোক মেধার পথ আটকে থাকা, আটকে
রাখা পদ্ধতি নিজে সহজ হোক
কিছু উদাহরণ দেখা যাক--
শক্ত, যুগ্ম, মুগ্ধ,
বাঙ্ময়, উচ্চ, আচ্ছা, লজ্জা,
কুজ্ঝটিকা, সঞ্জয়, পট্ট,
আড্ডা, বিষণ্ণ, উত্তম, খদ্দর,
অন্ন, সাব্বাশ, সম্মান, উল্লাস, উষ্ণ, আহ্নিক
সেটা সহজ যুক্তবর্ণে লেখা যাক--
শক্ত, যুগ্ম, মুগ্ধ, বাঙ্ময়, উচ্চ, আচ্ছা, লজ্জা, কুজ্ঝটিকা, সঞ্জয়,
পট্ট, আড্ডা, বিষণ্ণ, উত্তম, খদ্দর, অন্ন, সাব্বাশ, সম্মান, উল্লাস, উষ্ণ(ষ ),
আহ্নিক
চালু
|
সহজ
|
-
|
-
|
শক্ত
|
শক্ত
|
যুগ্ম
|
যুগ্ম
|
মুগ্ধ
|
মুগ্ধ
|
বাঙ্ময়
|
বাঙ্ময়
|
উচ্চ
|
উচ্চ
|
আচ্ছা
|
আচ্ছা
|
লজ্জা
|
লজ্জা
|
কুজ্ঝটিকা
|
কুজ্ঝটিকা
|
সঞ্জয়
|
সঞ্জয়
|
পট্ট
|
পট্ট
|
আড্ডা
|
আড্ডা
|
বিষণ্ণ
|
বিষণ্ণ
|
উত্তম
|
উত্তম
|
খদ্দর
|
খদ্দর
|
অন্ন
|
অন্ন
|
সাব্বাশ
|
সাব্বাশ
|
সম্মান
|
সম্মান
|
উল্লাস
|
উল্লাস
|
উষ্ণ
|
উষ্ণ
|
আহ্নিক
|
আহ্নিক
|
ইউনিকোড ফন্ট বলে তা সহজে পরস্পর পরিবর্তনযোগ্য (Convertible) সুতরাং যে কোনও রকম সন্দেহ
সহজে নিরসন করে নেওয়া যাবে পাট্টা লিখলে তা ‘ট+ট’, উষ লিখলে ‘ষ+ণ’
শিখতে দিতে হবে, কোঁচড়ে লুকিয়ে রেখে ‘কি জিনিস, বলো?’ করলে হবে
না লেখাপড়াটা কোনও ধাঁধা নয়, শিখবার বিষয়
-- ০০ --